আবারও কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়লেন নেইমার
আবারও কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়লেন নেইমারনেইমারের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। কার্টে করে তাঁকে মাঠে বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। যে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার ভয় নেইমার থেকে তাঁর ভক্তরাও এখন সব সময় পান, কিছুক্ষণ আগে ঠিক সেটাই ঘটেছে। চোট! নেইমার চোট পেয়েছেন। কথাটি শুনে যে কেউ বলবেন, আবারও!
কার্টে করে মাঠের বাইরে যাওয়ার সময় নেইমার বাঁ হাতে একবার মুখটা ঢাকলেন। চোখে বাঁধ না মানা অশ্রুর ঢল হয়তো ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। অবশ্য কার্টে ওঠার আগেই এ কাজটা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পুরো পৃথিবী ততক্ষণে জেনে গেছে কিংবা দেখেছে, তাঁর বাঁ ঊরুর পুরোনো চোটটি ফিরে এসেছে। আবারও মাঠের বাইরে ছিটকে পড়ার যন্ত্রণায় নেইমার চোখের পানি আটকাতে পারেননি। তাঁর নিজেরই ধৈর্যের বাঁধ হয়তো ভেঙে যাওয়ার কথা। আর কত!নেইমারের জীবনে চোট এক অন্তহীন চক্র। উপর্যুপরি চোটে তাঁর ক্যারিয়ারের গতি আর স্বাভাবিক নেই। এই চোটে পড়ছেন তো কিছুদিন কিংবা কয়েক মাস পর সুস্থ হয়ে আবারও মাঠে ফিরছেন এবং আবারও চোটে পড়ছেন। ছন্দে ফেরা তো বহু দূরের কথা, নেইমার শেষ কবে একটি মৌসুম ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছেন সেটা খুঁজে বের করাই এখন গবেষণার বিষয়! এক মৌসুমে অন্তত ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন, এমন কিছু খুঁজে বের করতে হলে ফিরতে হবে ২০১৬-১৭ মৌসুমে।
সান্তোসে ফেরার পর এ মৌসুমে যেমন চোট তাঁর পিছু ছাড়ছে না। সাও পাওলো রাজ্যের শীর্ষ লিগ ক্যাম্পেওনাতো পলিস্তায় গত মাসের শুরুতে ব্রাগান্তিনোর বিপক্ষে বাঁ ঊরুতে চোট পেয়ে প্রায় ছয় সপ্তাহ মাঠের বাইরে ছিলেন নেইমার। গত রোববার ব্রাজিলের শীর্ষ লিগ সিরি আতে ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে মাঠে ফেরেন বদলি হিসেবে। এরপর আজ এই লিগেই অ্যাথলেটিক মিনেইরোর বিপক্ষে সান্তোসের ২-০ গোলে জয়ের ম্যাচে নেইমার সেই বাঁ ঊরুতেই চোট পেলেন আবারও।ভাগ্যের কী নিদারুণ পরিহাস, এ ম্যাচটি তাঁর জন্য ছিল বিশেষ উপলক্ষ। সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরোয় এটা ছিল তাঁর শততম ম্যাচ। সে জন্য ‘১০০’ লেখা বিশেষ জার্সি পরে মাঠে নেমেছিলেন। দুই পায়েই ইনজুরি টেপ প্যাঁচানো। টিকতে পেরেছেন ৩৪ মিনিট পর্যন্ত। ২৭ মিনিটের মধ্যে সান্তোস ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই বেঞ্চের দিকে বদলির ইশারা করেন নেইমার। বাঁ ঊরুটা ধরে মাঠেই বসে পড়েন, তখন তাঁর চোখেমুখে ব্যথাটা স্পষ্ট ছিল। ক্লাবের স্টাফদের সহায়তায় কার্টে উঠে মাঠ ছাড়েন নেইমার। এ সময় সান্তোস থেকে আতলেতিকোর খেলোয়াড়েরাও নেইমারকে সান্ত্বনা দেন। বেঞ্চে গিয়ে পায়ে আইসপ্যাক দেন ব্রাজিল তারকা।বাঁ ঊরুর এ চোটেই গত মাসে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ব্রাজিল দলের হয়ে খেলতে পারেননি নেইমার। জাতীয় দলে তিনি সর্বশেষ খেলেন ২০২৩ সালের অক্টোবরে। উরুগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সে ম্যাচে বাঁ হাঁটুর এসিএল ও মিনিসকাস চোটে পড়েন। সুস্থ হয়ে আল হিলালের হয়ে গত বছরের অক্টোবরে মাঠে ফেরেন নেইমার। দুটি ম্যাচে অল্প সময় খেলার পর নভেম্বরে আবারও চোটে পড়ে প্রায় এক মাসের জন্য ছিটকে পড়েন মাঠের বাইরে। সৌদি প্রো লিগের এ ক্লাবে চোটের কারণে ১৮ মাসে খেলতে পেরেছেন মাত্র ৭ ম্যাচ।পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে আল হিলালের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে গত ফেব্রুয়ারিতে নেইমার ফিরে যান তাঁর শৈশবের ক্লাব সান্তোসে। ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য ফিট হয়ে ওঠা এবং ছন্দে ফিরতে এ সময়টুকু তিনি সান্তোসে নিয়মিত খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির হয়ে এখন পর্যন্ত যে ৯ ম্যাচ খেলেছেন নেইমার, তার মধ্যে পুরো ৯০ মিনিট মাঠে থাকতে পেরেছেন মাত্র একটি ম্যাচে। বাকি ৮ ম্যাচের মধ্যে ৪ ম্যাচে মাঠ ছেড়েছেন ৮০ মিনিটের আগে, একটি ম্যাচে ৮৫ মিনিটের আগে, বোতাফোগোর বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে নেমেছেন বিরতির পর এবং আজ আধা ঘণ্টার কিছু পরই তাঁকে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হলো।
সান্তোস নেইমারের পাশেই আছে। ক্লাবটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডলে লেখা হয়, ‘প্রিন্স! পুরো সান্তোস তোমার সঙ্গেই আছে।’
Comments
Post a Comment